বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন জারি থাকায় সুপ্রিম কোর্ট পুরীর রথযাত্রা স্থগিত করে দেয়। তখন এক মুসলিম যুবক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায় দেশের শীর্ষ আদালতে। বিষয়টি আলোড়ন ফেলে দেশের সর্বত্রই। কেন্দ্রীয় সরকারও সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে পুরীতে রথযাত্রা আয়োজনের অনুমতির জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে অনুরোধ জানায়। এর পর সুপ্রিম কোর্ট শর্তাধীন অনুমতি দেয় রথযাত্রার।
ওডিশায় এদিন জারি হয় কারফিউ। রথযাত্রার অনুষ্ঠানে ভক্তদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হয়। পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরের সেবায়েতরাই সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে এদিন রথযাত্রার অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এদিন সকালে ঐতিহ্য মেনে মন্দির চত্বরের সামনের জায়গা সোনার হাতল লাগানো ঝাড়ু দিয়ে প্রতীকী ভাবে পরিষ্কার করেন পুরীর গজপতি মহারাজ। এর পর সমস্ত নিয়মবিধি মেনে রথযাত্রা শুরু হয়। সন্ধ্যায় যাত্রা শেষ হয় মন্দির থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে গুণ্ডিচা মন্দিরে। পশ্চিমবাংলায় যেমন প্রধান উৎসব দুর্গাপুজো, ওডিশায় তেমনই রথযাত্রা। কিন্তু করোনার জেরে এবার ওডিশার এই দশদিনের শ্রেষ্ঠ উৎসব একেবারেই ম্লান হয়ে গিয়েছে।
পশ্চিমবাংলায়ও অধিকাংশ জায়গায় এবার রথের রশিতে সাধারণ মানুষের টান পড়েনি। এই রাজ্যের সবচেয়ে বড় দুটি রথযাত্রার উৎসব হয় ইসকন এবং মাহেশে। ইসকনের ছবিও এদিন পুরোপুরি ছিল পুরীর মতো। সাধারণ মানুষের উপস্থিতির অনুমতি মেলেনি। আগ্রহী ভক্তদের জন্য ছিল ইন্টারনেটে লাইভ দেখার সুযোগ। ইসকনের রথযাত্রায় অংশ নেন শুধু সেবায়েতরাই। যাঁরা অংশ নেন, তাঁরা ৭০ দিন আগে থেকে একা এবং আলাদা ছিলেন। মন্দিরের বাইরে যাননি। পুরো মন্দিরই এতদিন যেন কোয়ারেন্টিন সেন্টার হয়ে উঠেছিল। তাঁদের করোনা পরীক্ষাও হয়। রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরই তাঁরা রথের দড়ি টানার সুযোগ পেয়েছেন। মায়াপুরে ইসকনের মূল মন্দিরে বেশ ছোট আকারেই রথযাত্রার অনুষ্ঠান হয়। রাজ্যের অন্য ইসকন মন্দিরগুলিতেও সেভাবেই অনাড়ম্বর ভাবে ও ছোট আকারে অনুষ্ঠান হয়।
ইতিহাসের ধারক ও বাহক মাহেশের রথও এবার চলেনি। দীর্ঘ ৬২৪ বছরের মধ্যে এই প্রথম হুগলির শ্রীরামপুরের মাহেশের রথের দড়িতে টান পড়েনি। অবশ্য প্রথা মেনে সমস্ত আচার–অনুষ্ঠান এখানে পালিত হয়েছে। তবে কোনও ভক্তকে সেখানে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। রথযাত্রা কমিটির সঙ্গে যুক্ত সেবায়েত, কর্মীরাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ছিলেন হাতেগোনা ভক্তদের উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে রাস্তা দিয়ে মহাসমারোহে এবার আর মাহেশের রথ যাত্রা করেনি। ফলে শ্রীরামপুরবাসীদের মন বেশ ভার ছিল এদিন।
একই ভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির রথ, কোচবিহারের মদনমোহনের রথ, চাকদার শিমুরালি নিত্যানন্দ মঠের রথ, সুখসাগর গ্রামের জমিদার বাগচি পরিবারের রথ, অশোকনগরের গোস্বামীবাড়ির রথ, মদনপুর এক নম্বর জিপির কালীগঞ্জের রথ, চন্দননগরের রথ, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বড় রথের দড়িতেও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে টান পড়েনি। এ ছাড়া রাজ্যের বাড়ির রথগুলির অধিকাংশকেই এবার পথে নামতে দেখা যায়নি।